ঝিনাইদহের শৈলকুপা উপজেলা জুড়ে বিভিন্ন ইউনিয়নের শত শত বিঘা জমির পেঁয়াজের ফলন বিপর্যয় হয়েছে সেইসাথে কাঙ্খিত মূল্য না পাওয়ায় ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকরা দিশেহারা হয়ে পরেছে। কৃষকরা জানান, এবার বিঘা প্রতি পেয়াজ ২০ থেকে ২৫ মণ করে হচ্ছে আবার বাজারে প্রতি মণ পেঁয়াজ ৭০০-৮০০ টাকা মণ দরে বিক্রি হচ্ছে।
১ বিঘা জমিতে পেঁয়াজ উৎপাদন করতে ৩০ থেকে ৩৫ হাজার টাকা খরচ হয় অথচ এবার ১বিঘা জমির পেঁয়াজ বিক্রি হচ্ছে ১৮ থেকে ২০ হাজার টাকা। একে তো ফলন নেই তারপর আবার বাজারে দাম কম আবার অনেক কৃষক সমিতি থেকে লোন নিয়ে পেঁয়াজ চাষাবাদ করেছিল, সবমিলে কৃষকরা হতাশা ও দুশ্চিন্তায় দিন পার করছে। তবে লাল তীর কিং পেঁয়াজ অনেকেরই ভাল হয়েছে বলে কৃষকরা জানান।
কৃষকদের অন্যতম অর্থকরী ফসল হওয়ায় চাষীরা পেঁয়াজ চাষ বেশী করে থাকে। এই ফসল মাঠ থেকে সংগ্রহের পর বেশী দামের আশায় চাষীরা মজুদ রেখে সুবিধামত সময়ে বিক্রি করে আবার কেউ কেউ অল্প অল্প করে বাজারে এনে বিক্রি করে তাদের দৈনন্দিন চাহিদা মেটায়। পেঁয়াজ চাষের গুরুত্ব চাষিদের কাছে সব সময়ই বেশী। তাই বিভিন্ন ক্ষুদ্র চাষীরা বিভিন্ন সমিতি থেকে লোন নিয়ে এ চাষ করে থাকে।
গত বৃহস্পতিবার সরেজমিন উপজেলার বিভিন্ন মাঠ ঘুরে দেখা যায়, পেঁয়াজ চাষীরা পেঁয়াজ উঠানোর কাজে ব্যস্ত সময় পার করছে। এবছর নিম্নমানের ইন্ডিয়ান পেঁয়াজ চারার কারণে শত শত বিঘা জমির ফলন একেবারেই কম হয়েছে। পেঁয়াজ ঠিকমত বাড়তে পারেনি, পেয়াজ উঠালেই দেখা যাচ্ছে শিকড় আর শিকড়। তবে কিছু কিছু জমির পেঁয়াজ বেশ ভাল হয়েছে। উপজেলার পেঁয়াজ অধ্যুষিত এলাকার মধ্যে মনোহরপুর ইউনিয়নের পাইকপাড়া, বিজুলিয়া, নওপাড়া, দামুকদিয়া, মাধবপুর গ্রাম। ধলহরাচন্দ্র ইউনিয়নের ধাওড়া, বকদিয়া, খাসবকদিয়া কুশবাড়িয়া গ্রাম। হাকিমপুর ইউনিয়নের হরিহরা, সাধুহাটি, ররিয়া গ্রাম, নিত্যানন্দনপুর ইউনিয়নের আশুরহাট, বাগুটিয়া, সাবাসপুর, বুড়ামারা, বকশীপুর গ্রাম। দুধসর ইউনিয়নের ফলিয়া, নাকোইল, ভাটই, আবাইপুর ইউনিয়নের যুগনী, বাগনী, মীনগ্রাম, ব্যাসপুর, রুপদহ গ্রাম। বগুড়া ইউনিয়নের শিতালী, দলিলপুর, আওদা গ্রাম। দিগনগর ইউনিয়নের সিদ্দি, ইতালী, আগুনিয়াপাড়া, দেবতলা, হারুনদিয়া গ্রাম। উমেদপুর ইউনিয়নের বারইপাড়া, ব্রাহিমপুর, রয়েড়া, বিএলকে গ্রামসহ অন্য ইউনিয়নের বিভিন্ন গ্রামের মাঠে পেঁয়াজ উঠতে শুরু হয়েছে।
উপজেলার খাসবকদিয়া গ্রামের কৃষক আয়য়ুব আলী বলেন, ৬০ শতক জমিতে লাল তীর কিং মনে করে পেঁয়াজ লাগিয়েছিলাম। এবার ভাল পেঁয়াজ হয়নি। ফলন একেবারেই কম হয়েছে। বিঘা প্রতি ২০ থেকে ২৫ মন পেঁয়াজ হতে পারে। আবার বাজারে দাম একেবারেই কম হওয়ায় চিন্তার মধ্যে আছি।
উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মো. আনিসউজ্জামান খান বলেন, পেঁয়াজ চাষে ফলন বিপর্যয় হয়নি বলে আমার মনে হয়। তবে বাজারে পেঁয়াজের দাম কম হলেও ২-৩ মাস সংরক্ষণ করতে পারলে পেঁয়াজের দাম বাড়ার সম্ভাবনা আছে। এবছর উপজেলায় পেঁয়াজ উৎপাদন ৮১৯০ হেক্টর জমিতে ১,৫৯,৭০৫ মে. টন ছাড়িয়ে যাবে তবে আমাদের পেঁয়াজ উৎপাদন লক্ষমাত্রা ৮৫০০ হেক্টর জমিতে ১,৬১,৭৫৫ মে, টন।
উল্লেখ্য, মৌসুমে ইন্ডিয়ান নিম্নমানের বীজের কারণে এমনটি হয়েছে। অনেক কৃষক স্থানীয় খোলা বাজার থেকে এসব ইন্ডিয়ান পেঁয়াজের দানা ক্রয় করেন বলে একাধিক পেঁয়াজ চাষী জানান।
টিএইচ